OrdinaryITPostAd

গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খেলে বাচ্চা ফর্সা হয় এবং ওজন বাড়ে জানুন

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা মেধাবী হয়?বিশেষ করে যারা নতুন মা হতে যাচ্ছেন তাদের মনে একটাই প্রশ্ন জাগে গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খেলে বাচ্চা ফর্সা হয় এবং ওজন বাড়ে। এ বিষয়টি নিয়ে আপনারা সব সময় একে অন্যের কাছে জিজ্ঞাসা করেন এবং সাথে দুশ্চিন্তায় থাকেন। তাই এ বিষয় নিয়ে আজকে আমরা আপনাদেরকে খোলাখুলি ভাবে জানাতে যাচ্ছি।

গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খেলে বাচ্চা ফর্সা হয় এবং ওজন বাড়ে জানুন

গর্ভের বাচ্চা যদি কালো হয় এবং ওজন কম হয় তাহলে নানান জনে নানান ধরনের কথাবার্তা বলে থাকে, যা একজন মায়ের জন্য খুবই কষ্টদায়ক এবং যন্ত্রণাদায়ক হয়।চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খেলে বাচ্চা ফর্সা হয় এবং ওজন বাড়ে সে সম্পর্কে।

গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়?

গর্ভাবস্থায় কোননির্দিষ্ট খাবার খেলে শিশুর গায়ের রং ফর্সা হবে এমনটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। শিশু ত্বকের রং প্রধানত জিনগত কারণে নির্ধারিত হয়, যা পিতা-মাতার জিনের সংমিশ্রণের ওপর নির্ভর করে। গর্ভাবস্থায় একজন মা কি খাবার খাচ্ছেন, তা শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, 

তবে শিশুর গায়ের রং পরিবর্তন করতে পারে না। তবে কিছু প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো খেলে বাচ্চার রং ফর্সা হতে পারে এমন কিছু খাবারের তালিকা পরিবারের বয়োবৃদ্ধরা দিয়ে থাকেন। নিম্নে সেগুলো দেওয়া হল-

জাফরান ও দুধঃ জাফরানকে অনেকে আবার কেশরও। অনেক নারী আছে যারা গর্ভাবস্থায় কেশর দুধ খেয়ে থাকে। তাদের ধারণা গর্ভাবস্থায় কেশর দুধ খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করতে সাহায্য করে।

নারিকেলঃ গর্ভবতী অবস্থায় কোন মহিলা যদি নারিকেল খায় তাহলে বাচ্চা ফর্সা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ নারিকেলের সাদা শ্বাস গায়ের রং ফর্সা করতে সহায়তা করে।

ডিমঃ বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করতে চাইলে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ মাসে ডিমের সাদা মাংস খাওয়া উচিত। এতে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হবে।

দুধঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য দুধ খাওয়া অত্যাবশ্যকীয়। তাছাড়া দুধ শিশুর দৈহিক গঠনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী দুধ বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করতে সহায়ক।

চেরি ও বেরি জাতীয় ফলঃ চেরি ও বেরি জাতীয় ফলে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, জা যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের রোধ করে। তাই গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি করে স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি ইত্যাদি ফল খাওয়া হয় বাচ্চার ত্বক ফর্সা করার জন্য এবং ত্বক সুন্দর রাখার জন্য।

টমেটোঃ টমেটোতে লাইকোপেন থাকে যা ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। অনেকের মতে, গর্ভাবস্থায় টমেটো খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়।

কমলাঃ কমলা ভিটামিন সি হওয়ায় শিশুর শরীর গঠনের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। গর্ভাবস্থায় কমলা খেলে শিশুর ত্বক ভালো হবে এবং গায়ের রং ফর্সা হবে।

কচু শাকঃ কচু শাকের প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। গর্ভাবস্থায় কচু শাক খেলে গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর হয়ে যায়। তাছাড়া কচু শাক শিশুর গায়ের রং ফর্সা করতে সহায়তা করে।

বাদামঃ যা বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করতে চাইলে আপনি গর্ভাবস্থায় শুকনো বা ভেজানো আলমন্ড বাদাম খান। অনেকের ধারণা, আলমন্ড বাদাম বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা করতে খুব বেশি সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় কোন মাসে জাফরান ব্যবহার করলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়?

গর্ভবতী মহিলারা তাদের গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় জাফরান গ্রহণ করতে পারে। তবে প্রথম ত্রৈমাসিকে। জাফরান এড়ানো নিরাপদ। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বলে, চতুর্থ মাসের পরে যখন আপনি আপনার গর্ভ বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করতে করতে পারেন তখনই জাফরান খাওয়ার পরামর্শ দেন।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয়?

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া অত্যন্ত উপকার। কেননা এতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যা মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। খেজুর গর্ভাবস্থায় শক্তি বাড়ায় এবং গর্ভধারণের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চার ওজন বাড়ে?

আপনি যদি গর্ভাবস্থায় সঠিক খাবার গ্রহণ করেন তাহলে আপনার এবং আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং আপনার সন্তানের ওজনও ভালোভাবে বাড়ে। এমন কিছু খাবার আছে যে খাবারগুলো গর্ভাবস্থায় খেলে বাচ্চার ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। তবে জেনে নেয়া যাক সে খাবারগুলো কি কি-

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এসব খাবার শিশুর পেশি ও টিস্যু গঠনে সহায়তা করে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে মুরগি মাছ ডিম সয়াবিন বাদাম ও মটরশুঁটি খেতে পারেন। এছাড়া খেজুর,কিসমিস ও নরম খিচুড়িও খেতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর চর্বিঃ শক্ত করে চর্বি যেমন, আলমন্ড, আখরোট চিয়া সিড, অ্যাভোকাডো জলপাই তেল ও মাছের তেল ইত্যাদি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে এবং ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ দুধ, চিজ, দই, সানা এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। আর এই ক্যালসিয়াম সন্তানের হাড়ের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আয়রন এবং ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবারঃ অনেকেরই গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে শিশুর ওজন কিংবা শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য এ অবস্থায় পাঁচমিশালি ডাল, পালংশাক, কলিজা পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।

ফলমূল ও শাকসবজিঃ ফল সবজিতে ভিটামিন মিনারেল ও আঁশ থাকে, যা শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে। এজন্য গর্ভাবস্থায় কলা আপেল পাকা পেয়ারা খেতে পারেন। এছাড়া ভিটামিন সি -সমৃদ্ধ ফল এ সময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বিভিন্ন তাজা শাক-সবজি দিয়ে স্যুপ পেতে পারেন।

পর্যাপ্ত পানি পানঃ পানি শিশুর ওজন বাড়াতে সহায়ক নয়, তবে এটি মায়ের দেহে পুষ্টি সরবরাহ ও বর্জ্য নিষ্কাশনের সহায়ক, যা মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন পর্যন্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পুরো শস্যঃ ওটস, ব্রাউন রাইস এবং পুরো শস্যের রুটি মায়ের শক্তি জোগায় এবং সন্তানের বৃদ্ধিতে সহায়ক।

গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খাওয়া বাচ্চার জন্য ক্ষতিকরঃ

গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো মায়ের এবং সন্তানের উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে এমন কিছু খাবারে তারিকা দেওয়া হল যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত:

কাঁচা বা কম সেদ্ধ করা মাছ এবং সামুদ্রিক খাবারঃ কাঁচা বা কম সেদ্ধ করার মাছ এবং সামুদ্রিক খাবার যেমন, সুশি, কাঁচা স্যালমল গর্ভাবস্থায় না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইট থাকতে পারে যা সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

উচ্চ পারদযুক্ত মাছঃ শার্ক, সোর্ডফিশ, কিং ম্যাকরেল ইত্যাদি উচ্চ পারদ যুক্ত মাছ গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলোতে উচ্চ মাত্রায় পারদ থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর

অপরিষ্কার বা কাঁচা ডিমঃ এতে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে এবং মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

অপরিশোধিত দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যঃ পাস্তুরাইজড না হলে দুধ বা দইয়ে লিস্টেরিয়া ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইনঃ দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেন এড়ানো উচিত। অতিরিক্ত ক্যাফেইন শিশুর হৃদযন্ত্র ও ওজনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ক্যাফেইন যুক্ত খাবার হল-কফি চা চকলেট এবং সফট ড্রিংকস।

অ্যালকোহলঃ গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল এড়ানোর সবচেয়ে ভালো। মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং ফিটাল অ্যালকোহল সিন্ড্রোম (FAS) সৃষ্টি করতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ফাস্ট ফুডে অতিরিক্ত লবণ, চিনি এবং আনহেলদি ফ্যাট থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা ওজন বাড়ানোর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয়ঃ এতে রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এটি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

তাই গর্ভাবস্থায় খাবার খাওয়ার প্রতি যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। প্রয়োজনের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url