সিরাম কি? সিরাম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
রাইস সিরাম ব্যবহারের নিয়ম হ্যালো
বন্ধুরা, নিশ্চয়ই আপনারা সিরামের কথা শুনছেন। বর্তমানে রূপচর্চার ক্ষেত্রে সিরাম
একটি বড় স্থান দখল করে নিয়েছে। এখনকার মেয়েরা সিরাম ছাড়া স্কিন কেয়ারের কথা
ভাবতেই পারে না।
![]() |
কিন্তু তারপরও সিরাম সম্পর্কে অনেকের মনে নানা ধরনের প্রশ্ন জাগে যেমন সিরাম কি,
সিরাম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা
আপনাদেরকে সিরাম ব্যবহারের যাবতীয় খুঁটিনাটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে
যাচ্ছি।
ভূমিকাঃ
প্রত্যেকেই চায় নিজের ত্বককে সুন্দর রাখতে যাতে সবাই তার প্রশংসা করে। তাই এই
ত্বক সুন্দর রাখার চক্করে পড়ে অনেকেই নানা ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। আর
এর মধ্যে সিরাম হচ্ছে অন্যতম। সিরাম একটি পানির মত পাতলা এবং কিছুটা ঘন তরল
হওয়ায় খুব সহজে ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে মিশে যায় এবং দ্রুত কাজ করে।
এটি ব্যবহারে ফলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়ে থাকে যার কারণে
এটি বর্তমানে মেয়েদের কাছে একটি খুবই প্রসাধনী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সিরাম কি?
সিরাম হল এক ধরনের স্কিন কেয়ার পণ্য, যা দ্রুত শোষিত হয় এবং ত্বকের গভীরে
প্রবেশ করে কার্যকর উপাদান সরবরাহ করে। এটি সাধারণত পানির মতো পাতলা এবং কিছুটা
ঘন তরল হয়ে থাকে। ফলে খুব সহজেই ত্বকের সঙ্গে মিশে যায় এবং খুব দ্রুত কাজ
করে।
তাছাড়া এতে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য উচ্চমাত্রার সক্রিয়
উপাদান থাকে। যা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন- বলিরেখা, বয়সের ছাপ,
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকে খুবই অল্প পরিমাণে ব্যবহার
করতে হয়।
অন্যান্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের তুলনায় সিরাম ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকে
দ্রুতই ফলাফল পাবেন। এক কথায় বলতে গেলে সিরাম হল বিভিন্ন ধরনের ভালো
ইনগ্রিডিয়েন্স দিয়ে তৈরি একটি ভালো প্রোডাক্ট, যা ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি কাজ
করে।
সিরাম এর কাজ কি?
ত্বকের যত্নে ছিলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এখনকার দিনে সিরাম ছাড়া স্কিন
কেয়ার কল্পনাই করা যায় না। সিরাম হালকা ও উচ্চ ঘনত্বের স্কিন প্রোডাক্ট হওয়ায়
খুব সহজেই ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং ত্বকে পুষ্টি যোগায়। এটি সাধারনত
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, নিয়াসিনামাইড, রেটিনল এবং
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয়।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের সিরাম পাওয়া যায় একেক ধরনের সিরাম এক এক ধরনের কাজ করে
থাকে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের ত্বকের যত্নে সিরামের বিভিন্ন ধরনের
কাজ সম্পর্কে-
উজ্জ্বলতা বাড়াতেঃ অনেক কারণে ত্বক অনুজ্জ্বল হয়ে যায়। আর এই
অনুজ্জ্বল ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সিরাম খুবই উপকারী এবং
কার্যকরী।
ত্বকের হাইড্রেশন বাড়াতেঃ হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সিরাম ত্বককে
আর্দ্র রাখে এবং শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।
ব্রণ ও দাগ কমাতেঃনিয়াসিনামাইড স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সিরাম ব্রণ ও
বিভিন্ন ধরনের দাগ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ওপেন পোর মিনিমাইজ করতেঃ সিরাম ত্বকের বিভিন্ন ধরনের গর্ত ও ওপেন পোর
মিনিমাইজ করতে সাহায্য করে কাজ করে।
বয়সের ছাপ কমানোঃ সিরাম বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে যেমন, রেটিনল
সিরাম ফাইন লাইন ও বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বকে টানটান রাখে।
ত্বকের টেক্সচার উন্নত করেঃ সিরাম ব্যবহারের ফলে ত্বকের টেক্সচার উন্নত
করে। তাছাড়া সিরাম ত্বককে মসৃণ ও কোমল করতে সাহায্য করে।
সিরাম ব্যবহারের সঠিক নিয়মঃ
আমরা অনেকেই সিরাম ব্যবহার করতে চাই। কিন্তু সিরাম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম না
জেনে সিরাম কিনে থাকি। সিরাম কেনার পূর্বে সিরাম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানা
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সিরাম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম না জানলে আপনি আপনার
কাঙ্খিত রেজাল্ট পাবেন না। তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক সিরাম ব্যবহারের সঠিক
নিয়মসমূহ সম্পর্কে-
- সিরাম ব্যবহারের পূর্বে আপনার মুখ ভালোভাবে একটি ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন, যাতে করে আপনার ত্বকে ময়লা, তেল বা মেকাপের অবশিষ্টাংশ না থাকে। কারণ পরিষ্কার ত্বকে সিরাম ভালোভাবে শোষিত হয়।
- যারা মুখে আগে থেকেই টোনার ব্যবহার করেন তারা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ধোয়ার পর মুখে টোনার লাগিয়ে নিন। কারণ এটি ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে এবং সিরাম ভালোভাবে শোষিত হতে সাহায্য করে।
- ত্বক পরিষ্কার করার পর হালকা ভেজা ভাব থাকতে ত্বকে সিরাম ব্যবহার করতে হবে। এতে সিরাম ভালো কাজ করবে। তবে কিছু কিছু সিরাম আছে যেগুলো ত্বক শুষ্ক অবস্থায় ব্যবহার করতে হয়।
- প্রথমে ২-৩ ফোটা সিরাম হাতের তালুতে নিন এবং আহত ভাবে আলতোভাবে ট্যাপ ট্যাপ করে মুখে লাগান। তাছাড়া সরাসরি ড্রপার মুখে না লাগিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে সিরাম লাগানো ভালো। সিরাম লাগানোর সময় মনে রাখতে হবে, কখনোই সিরাম মুখে ঘষবেন না, হালকা টোকা দিয়ে মুখে লাগান। যাতে ত্বক ভালোভাবে সিরাম শোষণ করতে পারে।
- মুখে সিরাম লাগানোর পর ১-২ মিনিট অপেক্ষা করুন, যাতে সিরাম ভালোভাবে ত্বকে প্রবেশ করতে পারে।
- সিরাম ব্যবহারের পরে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি ভালো মানের মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। কেননা সিরাম আপনার ত্বক ময়শ্চারাইজড করতে পারে না।
- সকালে সিরাম ব্যবহার করলে অবশ্যই সিরাম ব্যবহারের পরে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। কেননা এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্নি থেকে রক্ষা করবে।
- সিরাম সাধারণত রাতে ব্যবহার করা ভালো। কারণ ত্বক রাতে পুনর্জীবিত হয়। তাই রাতে ব্যবহার করলে বেশি কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে।
কত বছর বয়সে সিরাম ব্যবহার করতে হবে?
আপনারা অনেকেই সিরাম ব্যবহার করতে চান, কিন্তু কোন বয়সে সিরাম ব্যবহার করা
ত্বকের জন্য নিরাপদ আপনারা তা বুঝতে পারেন না। সাধারণত কৈশোরের শেষে এবং যৌবনের
শুরুতে সিরাম ব্যবহার করা যেতে পারে অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স থেকে সিরাম ব্যবহার করা
ত্বকের জন্য নিরাপদ। তবে তা নির্ভর করবে আপনার ত্বকের সমস্যা এবং প্রয়োজনের
উপর নির্ভর করে।
সিরাম ব্যবহার বন্ধ করলে ত্বকের কি কোন ক্ষতি হয়ঃ
আমরা যারা ত্বকের যত্নে সিরাম ব্যবহার করি তাদের মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক করে
সেটা হল সিরাম ব্যবহার বন্ধ করে দিলে কি ত্বকের কোন ক্ষতি হবে? তবে আমরা যদি
সিরাম ব্যবহার বন্ধ করে দেই তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ত্বকের সরাসরি ক্ষতি নাও
হতে পারে, তবে সিরামের মত উপকারী স্কিন কেয়ারপণ্য ব্যবহার বন্ধ করার প্রভাব
সময়ের সাথে সাথে ত্বকের চেহারা এবং টেক্সচারে পরিবর্তন আনতে পারে।
সিরামে কিছু সক্রিয় উপাদান থাকে, যা ত্বকের বিভিন্ন উপকারিতা যেমন
হাইড্রেশন অ্যান্টি এজিং ইফেক্ট বা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কাজ করে। এই ধরনের
সিরাম ব্যবহার বন্ধ করার ফলে ত্বকে ধীরে ধীরে বিপরীত প্রভাব পড়তে পারে।
সিরাম ব্যবহারের উপকারিতাঃ
ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে সিরামের অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে সেই
উপকারিতা সমূহ দেওয়া হলো-
- সিরাম ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। সিরামের মধ্যে ভিটামিন সি, নায়াসিনামাইড বা হায়ালুরোনিক অ্যাসিড থাকে, যার ফলে ত্বক আরও উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত দেখায়।
- একটু বয়স হয়ে গেলে ত্বকের মধ্যে বয়সের ছাপ পড়ে যায় আর এই বয়সের ছাপ কমাতে সিরাম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে অ্যান্টি এজিং সিরাম রিংকল ফাইনল লাইন এবং স্কিন স্যাকিং সাহায্য করে।
- ত্বকের মশ্চারাইজার ধরে রাখার ক্ষেত্রেও সিরাম একটি কার্যকরী উপাদান। বিশেষ করে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সিরাম ত্বকে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।
- সিরামের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ব্রণ প্রতিরোধ করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। স্যালিসিলিক এসিড বা টি- ট্রি ওয়েল সমৃদ্ধ ছিলাম ব্রণ কমাতে খুবই কার্যকরী।
- সিরাম খুব সহজেই ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বককে স্বাস্থ্য উজ্জ্বল ও টানটান রাখতে সহায়তা করে।
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্নির কারণে আমাদের তোকে অনেক সময় কালো দাগ-ছোপ ও সানবার্ন হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত সিরাম ব্যবহার আপনাকে ত্বকের এসব সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি দেবে।
সিরাম ব্যবহারের অপকারিতাঃ
স্কিন কেয়ারের জন্য সিরাম একটি খুবই জনপ্রিয় প্রোডাক্ট। এটি আমাদের ত্বকের
বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করে থাকে। তবে কিছু অপকারিতা ও পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে ভুল ভাবে ব্যবহার করা কিংবা ভুল
সিরাম ব্যবহার করার ফলে। তবে আসুন জেনে নেয়া যাক সিরাম ব্যবহারের কিছু
সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-
এলার্জি বা চুলকানিঃ আমাদের এক একজনের ত্বকের ধরন একই রকম হয়ে থাকে।
তাই সিরাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কারো ত্বকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চুলকানি,
র্যাশ বা জ্বালা হতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে সিরাম ব্যবহার বন্ধ করে
দিতে হবে।
ত্বক শুষ্ক বা লাল হয়ে যাওয়াঃ বাজারে বিভিন্ন ধরনের সিরাম পাওয়া
যায়। বিশেষ করে ভিটামিন সি, রেটিনল বা এসিড সমৃদ্ধ সিরাম ব্যবহারের ফলে ত্বক
শুষ্ক বা লাল হতে পার।
ব্রণ বা র্যাশ বেড়ে যাওয়াঃ বেশ কিছু ভারি এবং তেল ভিত্তিক সিরাম আছে
যেগুলো অয়েলি বা ব্রণ প্রবণ ত্বকে ব্রণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
সূর্যের সংবেদনশীলতাঃ এমন কিছু ছিলাম আছে যেগুলো সূর্যেতে সংবেদনশীল
হয়ে থাকে যেমন (ভিটামিন সি, রেটিনল সমৃদ্ধ) শ্রীরাম ব্যবহারের ফলে সূর্যের
আলোতে বেশি সংবেদনশীল হয়, ফলে ত্বকে দাগ পরে।
মন্তব্যঃ
আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে সিরাম সম্পর্কে আপনাদের মনে যেসব প্রশ্ন ছিল
সবগুলোর সমাধান পেয়ে গেছেন। তাই নিশ্চিন্তে আপনারা আপনাদের ত্বকের ধরন অনুযায়ী
সঠিক নিয়মে সিরাম ব্যবহার করে ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে পারবেন।
তবে যদি কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে সিরাম ব্যবহার বন্ধ
করে দিবেন এবং একজন ভালো ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নিবেন। আশা করি আর্টিকেলটি
পড়ে আপনারা ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। আর এরকম নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের
ওয়েবসাইটে চোখ রাখবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url